যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের ঘোষণা
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০০; আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৪
ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তার নতুন প্রশাসনের প্রথম ঘোষণাগুলোর একটি হলো মার্কিন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব প্রাপ্তির প্রচলিত নিয়ম বাতিল করা।
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নিয়মে স্বয়ংক্রিয় নাগরিকত্ব তখনই কার্যকর হবে যখন জন্মগ্রহণকারী শিশুর অন্তত একজন অভিভাবক মার্কিন নাগরিক হবেন বা বৈধভাবে দেশটিতে বসবাসের অনুমতি পাবেন। ট্রাম্প এবং পরবর্তী ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের প্রচার সাইটে এই পরিবর্তনের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়েছে।
এই নতুন সিদ্ধান্তটি কার্যকর হবে আগামী ২০ জানুয়ারি, যখন ট্রাম্প ও ভ্যান্স আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। প্রচার সাইটের তথ্যমতে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসন এই নির্দেশনা পাঠাবে এবং এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। মার্কিন ভূখণ্ডে জন্মগ্রহণ করা শিশুদের জন্য বর্তমান নাগরিকত্বের সুবিধাটি মূলত সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর অধীনে আসে, যা "জন্মভূমি নাগরিকত্ব" নামে পরিচিত।
সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ:
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইনজীবীরা ট্রাম্পের এই ঘোষণা সংবিধানবিরোধী বলে দাবি করছেন। বিশিষ্ট অভিবাসন আইনজীবী গ্রেগ সিসকাইন্ড বলেন, "এই নির্দেশনা ১৪তম সংশোধনীর সরাসরি লঙ্ঘন এবং আদালতে এটির বিরুদ্ধে মামলা করার সুযোগ তৈরি হবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করা সকল ব্যক্তিই দেশটির নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই নিয়মটি বহুদিন ধরে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের জন্য একটি সহজ পথ হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। বিশেষত বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীরা এই সুবিধার মাধ্যমে তাদের সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারেন এবং পরে সেই শিশুদের মাধ্যমে বৈধভাবে বসবাসের অনুমতি ও নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
নতুন নিয়মের প্রভাব:
পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক শুমারি অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৩৩ কোটি ৪৯ লাখ জনসংখ্যা রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ অভিবাসী। এদের মধ্যে অনেকেই বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী, এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী বসবাস ও নাগরিকত্বের আশায় রয়েছেন। এর মধ্যে হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেই এই নিয়মের আওতায় ছিলেন। বর্তমান নিয়মে মার্কিন মাটিতে সন্তান জন্ম দিয়ে নাগরিকত্বের সুবিধা পাওয়া অভিবাসীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত বেশ বড় ধাক্কা দিতে পারে।
জনমত বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশী পরিবারগুলোকে ভিন্ন পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ নাগরিকত্ব লাভে এই পথটি যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সহজ ছিল।
নতুন প্রশাসনের ভাবনা:
এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রে "ইমিগ্রেশন রিফর্ম" বা অভিবাসন সংস্কারে নতুন পথে হাঁটার অঙ্গীকার করছে। তাদের মতে, এই পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও অভিবাসন নীতি আরও সুসংহত করবে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: