শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতকে সতর্কবার্তা দিলেন ড. ইউনূস
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৭:৫৯; আপডেট: ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৬:১৭
ঢাকার নিজ বাসভবনে দ্য হিন্দুর সাংবাদিকদের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক, দেশের রাজনৈতিক সংস্কার এবং ১০০ দিনের সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন।
তিনি উল্লেখ করেন, “ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সেই সম্পর্ক হতে হবে সম্মানের ভিত্তিতে।”
ড. ইউনূস আরো বলেন, “আমাদের সরকার বাংলাদেশকে কট্টরপন্থার হাত থেকে মুক্ত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। তবে দেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের যেসব খবর ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলোর বেশিরভাগই রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা।”
ড. ইউনূস তাঁর সরকারের ১০০ দিনের কার্যক্রমের সাফল্য তুলে ধরেন এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি জানান,
সংবিধান পুনর্গঠন: সংবিধানের কয়েকটি ধারা পর্যালোচনা করে এমন একটি কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরও শক্তিশালী করবে।
প্রশাসনিক সংস্কার: দুর্নীতি দমন কমিশনের কার্যক্রমকে বেগবান করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কট্টরপন্থার উত্থান এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে দেশে-বিদেশে নানা সমালোচনা চলছে। ড. ইউনূস এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “এসব অভিযোগের পেছনে রয়েছে কিছু অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। এদের উদ্দেশ্য হলো সরকারের কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটানো।”
তিনি আরও দাবি করেন, “আমাদের সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাস করে। তবে আমরা এমন কোনো কর্মপন্থা গ্রহণ করব না, যা দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ করে।”
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ড. ইউনূস জানান, “এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেই তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই, আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ হোক।”
এদিকে, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যেই আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তাঁরা শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং জনসমর্থন আদায়ে প্রস্তুত রয়েছে।
ড. ইউনূসের সরকার আন্তর্জাতিকভাবে সমালোচনার মুখে পড়েছে। বিশেষত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারত সরকারের পক্ষ থেকে কট্টরপন্থা মোকাবিলায় সরকারের অবস্থানের সমালোচনা করা হয়েছে।
তবে ড. ইউনূস বলেন, “আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ চাই না। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে একটি উদাহরণমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার একদিকে রাজনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন ও বিচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। দেশি-বিদেশি সমালোচনার মুখে সরকার দৃঢ় অবস্থানে থেকে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।
২০৩৪ সালের মধ্যে এই উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: