ঢাকা রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য দ্রুত নির্বাচন: আসিফ নজরুল

নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০২; আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০৫

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। রাজধানীতে "অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন: আইন মন্ত্রণালয়ের অগ্রগতি ও পরিকল্পনা" শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

দ্রুত নির্বাচন ও নীতিগত অবস্থান

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, "আমরা এমন একটি নির্বাচন চাই, যেখানে কোনো পক্ষ ভুয়া নির্বাচনের সুযোগ না পায়। আগে যেমন প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে, সেসবের পুনরাবৃত্তি আমরা চাই না।" তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধিকাংশ সদস্য তাদের পেশায় ফিরে যেতে আগ্রহী, তাই প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনই তাদের মূল লক্ষ্য।

১০০ দিনের অগ্রগতি

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ১০০ দিনে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গৃহীত কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো:

১. মামলা প্রত্যাহার

  • ২০২৪ সালের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত গণআন্দোলনে দায়েরকৃত প্রায় সব ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার।

২. সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল

  • বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩ বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে নতুন সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৪ প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

৩. বিচার বিভাগের উন্নয়ন

  • সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে পাঁচজন এবং হাইকোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ।
  • অধস্তন আদালতে ১০৯ জন বিচারক এবং আইন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানো।

৪. দুর্নীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ

  • বিচারক ও রেজিস্ট্রেশন বিভাগের কর্মকর্তাদের সম্পদ বিবরণী যাচাই।
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের জন্য নতুন তদন্ত সংস্থা গঠন।

সংস্কার কমিশনগুলোর কার্যক্রম

ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন, নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন, এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। এসব কমিশন সংস্কারের মাধ্যমে আইন ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও শক্তিশালী করতে কাজ করছে।

গুম বিরোধী সনদ

গুম বিরোধী আন্তর্জাতিক সনদ অনুসমর্থন এবং এ সংক্রান্ত কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধান ও দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছে।

বিচারব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন

  • মডেল ই-কোর্ট ও মডেল সাব-রেজিস্ট্রি অফিস স্থাপনের উদ্যোগ।
  • এটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সরকারি আইন কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম

নতুনভাবে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করতে এই ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা ও বিচার ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অতি দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন এবং প্রাসঙ্গিক সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার মধ্য দিয়ে তারা দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে ফিরিয়ে দিতে চায়।

আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের মতে, “আমাদের লক্ষ্য শুধু একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নয়, বরং এমন একটি নির্বাচন নিশ্চিত করা যা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top