ভারতের মণিপুরে সংঘাতের নতুন পর্যায়
নিউজ ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ নভেম্বর ২০২৪ ১৮:০৬; আপডেট: ৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৫:২৭
মণিপুরে কুকি এবং মৈতৈ জনজাতির মধ্যে চলমান সংঘাতের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। সম্প্রতি সেনাপতি জেলায় কট্টর মৈতৈ গোষ্ঠী আমাম্বাই টেনগ্গোলের সঙ্গে নাগা গোষ্ঠীর সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আগে নাগা গোষ্ঠী মৈতৈ ও কুকি উভয়ের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করলেও, এখন নাগা-মৈতৈ সংঘাতের ফলে রাজ্যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই সংঘাতের প্রেক্ষিতে সেনাপতি জেলায় ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে স্থানীয় তিনটি নাগা সংগঠন। পাশাপাশি তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধও ঘোষণা করেছে।
নাগা গোষ্ঠীর অভিযোগ, গত ৩১ অক্টোবর দুই নাগা ব্যবসায়ীকে অপহরণ করা হয়েছে মৈতৈ গোষ্ঠী আমাম্বাই টেনগ্গোলের দ্বারা। এই ঘটনার জন্য মৈতৈ গোষ্ঠীকে জনসমক্ষে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি জানিয়েছে নাগা গোষ্ঠীগুলি, এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে সেনাপতি জেলা প্রশাসন এবং মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ৩ মে থেকে মণিপুরে জাতিগত হিংসার ঘটনা চলছে। মাঝে মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। এখনও হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে, সংঘাতের কারণে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকছে।
ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মৈতৈ জনজাতি, যারা সম্প্রতি তাদেরকে তফশিলি উপজাতির তকমা দেওয়ার দাবি তুলেছিল। তবে স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা তাদের এই দাবির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে মণিপুর হাইকোর্টে একটি মামলা চলছিল। আদালত মৈতৈদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে।
এই নির্দেশনার পর জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল, যা চূড়াচাঁদপুরে সহিংসতায় রূপ নেয়। পরে হাইকোর্ট সংরক্ষণ নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ ফিরিয়ে নেয়।
এখনো বিক্ষিপ্ত হিংসা অব্যাহত আছে রাজ্যে। তফশিলি উপজাতির দাবি ছাড়াও সংরক্ষিত জমি ও সার্ভে নিয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে চূড়াচাঁদপুর জেলায় মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগানোর ঘটনায় ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা যুক্ত ছিল।
মৈতৈ ও কুকিদের সংঘর্ষ এখন অন্যান্য জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে, যার ফলে প্রাণ হারিয়েছে কয়েকশো সাধারণ মানুষ। দুই জনজাতির মধ্যে সংঘাত থামাতে বাফার জোন তৈরির চেষ্টা হলেও, মাঝে মাঝেই নতুন করে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছে, পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: