ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

২০০৩ সালের পর প্রথমবারের মত ব্যালন ডি’অর তালিকায় নেই মেসি, রোনাল্ডো

ক্রীড়া ডেস্ক | প্রকাশিত: ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:০৯; আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০১:২০

ব্যলন ডি’অর মানেই মেসি আর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। গত ১৬ বছর যাবৎ পৃথিবীর সকল ফুটবল প্রেমীরা জেনে আসছিল। অবশেষে দীর্ঘ ১৬ বছর পর মেসি, রোনালদো বিহীন সংক্ষিপ্ত ৩০ জনের তালিকা থেকে বাদ পড়লেন তারা।

গত ১৬ বছরের মধ্যে ১৩ বারই যারা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন পুরস্কারটা, সেই লিওনেল মেসি ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর কেউ এই বছরের ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকাতেই জায়গা পাননি! বর্ষসেরা ফুটবলারের এই পুরস্কার জয়ের লড়াইয়ে অনুমিতভাবে আছেন রেয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিউস জুনিয়র, জুড বেলিংহ্যাম ও ম্যানচেস্টার সিটির আর্লিং হলান্ড।

ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’- এর পুরস্কার ব্যালন দ’র ২০২৪ এর ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা বুধবার রাতে প্রকাশ করা হয়। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় নেই মেসি ও রোনালদোর কেউই।

মেসি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন রেকর্ড আটবার, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার রোনালদো। ২০০৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই দুজনের বাইরে কেউ পুরস্কারটি জিততে পারেননি। ২০১৮ সালে জেতেন রেয়াল মাদ্রিদের ক্রোয়াট মিডফিল্ডার লুকা মদ্রিচ।

২০২০ সালে কোভিডের কারণে পুরস্কারটি দেওয়া হয়নি। এর আগে-পরে দুই বছরে আবার জেতেন মেসি। ২০২২ সালে তা ওঠে তখন রেয়ালে থাকা ফরাসি স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার হাতে। একই বছরে বিশ্বকাপ জিতে ২০২৩ সালে পুরস্কারটি অষ্টমবারের মতো জেতেন মেসি।

রোনালদো ও মেসি ইউরোপিয়ান ফুটবলের পাঠ চুকিয়েছেন আগেই। সৌদি আরবের ক্লাব আল নাস্‌রের হয়ে গত মৌসুমটা ব্যক্তিগতভাবে অবশ্য দারুণ কাটে রোনালদোর। সৌদি প্রো লিগে ৩১ ম্যাচে তিনি গোল করেন ৩৫টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ক্লাবের হয়ে ৪৫ ম্যাচে ৪৪ গোল করেন ৩৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড।

তবে গত জুন-জুলাইয়ে জার্মানিতে অনুষ্ঠিত ইউরোয় পর্তুগালের পাঁচ ম্যাচে একবারও জালের দেখা পাননি আন্তর্জাতিক ফুটবলের রেকর্ড স্কোরার রোনালদো। কোয়ার্টার-ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ২০১৬ আসরের চ্যাম্পিয়নরা।

ইউরোর একই সময়ে আর্জেন্টিনা কোপা আমেরিকা জিতলেও, ব্যক্তিগতভাবে আসরে ভালো করতে পারেননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসি। ফাইনালে অ্যাঙ্কেলে চোট পেয়ে এখনও মাঠের বাইরে আছেন তিনি। ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে তিনি খুব একটা খারাপ করেননি। তবে ব্যালন দ’রের লড়াইয়ে জায়গা পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট হয়নি।

এবার পুরস্কারটি জয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাখা হচ্ছে ভিনিসিউসকে। গত মৌসুমে রেয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, লা লিগা ও স্প্যানিশ সুপার কাপ জয়ে বড় অবদান রাখেন তিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে দলের ২-০ ব্যবধানের জয়ে একটিসহ আসরে তিনি করেন ৬ গোল। নির্বাচিত হন আসরের সেরা খেলোয়াড়।

২০২৩-২৪ মৌসুমে লা লিগায় তিনি করেন ১৫ গোল। এছাড়া স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে করেন হ্যাটট্রিক।

জুন-জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় কোপা আমেরিকায় জাতীয় দল ব্রাজিলের হয়ে গ্রুপ পর্বে ভিনিসিউস জোড়া গোল করেন প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। কার্ডের খাড়ায় কোয়ার্টার-ফাইনাল খেলতে পারেননি তিনি। ওই ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল।

গত মৌসুমে প্রথম দল হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটির টানা চতুর্থ প্রিমিয়ার লিগ জয়ে বড় অবদান রাখেন হলান্ড। চোটের কারণে লিগের সব ম্যাচ তিনি খেলতে পারেননি। ৩১ ম্যাচ খেলে গোল করেন ২৭টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে গত মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৪৫ ম্যাচে তার গোল ৩৮টি। তার জাতীয় দল নরওয়ে ইউরোর মূল পর্বে উঠতে পারেনি।

গত মৌসুমে রেয়ালে যোগ দিয়েই দারুণভাবে নিজেকে মেলে ধরেন বেলিংহ্যাম। ইংলিশ এই মিডফিল্ডার লা লিগায় ২৮ ম্যাচে ১৯ গোলের সঙ্গে অ্যাসিস্ট করেন ৬টি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচে তার গোল ৪টি, অ্যাসিস্ট ৫টি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৪২ ম্যাচে ২৩ গোল করার পাশাপাশি সতীর্থের ১৩ গোলে অবদান রাখেন তিনি।

আগামী ২৮ অক্টোবর প্যারিসে জমকালো অনুষ্ঠানে বিজয়ীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে। ব্যালন দ’র জয়ী নির্বাচিত হয় সাংবাদিকদের ভোটে।

ব্যালন দ’র দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়মে পরিবর্তন আনা হয় ২০২২ সালে। আগে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে পুরো বছরের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নেওয়া হলেও এখন বিবেচনায় ধরা হয় ইউরোপিয়ান ফুটবলের একটি মৌসুমকে (আগস্ট থেকে জুলাই)।

১৯৫৬ সাল থেকে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়কে ব্যালন দ’র পুরস্কার দেওয়া চালু হয়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি শুধু ইউরোপের খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। এরপর থেকে ইউরোপে খেলা বিশ্বের যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য পুরস্কারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর ২০০৭ সাল থেকে কেবল ইউরোপের সেরা নয়, পুরস্কারটি দেওয়া শুরু হয় বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে।

ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার আর ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন দ’র একীভূত হয়েছিল ২০১০ সালে। ফিফার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে আবার একাই ব্যালন দ’র দেওয়া শুরু করে ফ্রান্স ফুটবল। তবে এই বছর থেকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা উয়েফার সঙ্গে একীভূত হয়ে ব্যালন দ’র দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা। তাদের সঙ্গে চুক্তির ফলে নিজেদের দেওয়া বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার বাতিল করে দেয় উয়েফা।

ব্যালন ডি’অর জন্য ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা: জুড বেলিংহ্যাম (রেয়াল মাদ্রিদ), রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি), ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি), ফেদেরিকো ভালভের্দে (রেয়াল মাদ্রিদ), এমিলিয়ানো মার্তিনেস (অ্যাস্টন ভিলা), আর্লিং হলান্ড (ম্যানচেস্টার সিটি), নিকো উইলিয়ামস (আথলেতিক বিলবাও), গ্রানিত জাকা (বায়ার লেভারকুজেন), আর্তেম দোভিক (জিরোনা/রোমা), টনি ক্রুস (রেয়াল মাদ্রিদ), ভিনিসিউস জুনিয়র (রেয়াল মাদ্রিদ), দানি ওলমো (লাইপজিগ/বার্সেলোনা), ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ (বায়ার লেভারকুজেন), মার্টিন ওডেগোর (আর্সেনাল), মাটস হুমেলস (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড), রদ্রি (ম্যানচেস্টার সিটি), হ্যারি কেইন (বায়ার্ন মিউনিখ), ডেকলান রাইস (আর্সেনাল), ভিতিনিয়া (পিএসজি), কোল পালমার (ম্যানচেস্টার সিটি/চেলসি), দানি কারভাহাল (রেয়াল মাদ্রিদ), লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), হাকান কালহানোগলু (ইন্টার মিলান), উইলিয়াম সালিবা (আর্সেনাল), কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/রেয়াল মাদ্রিদ), লাউতারো মার্তিনেস (ইন্টার মিলান), অ্যাডেমোলা লুকম্যান (আতালান্তা), আন্টোনিও রুডিগার (রেয়াল মাদ্রিদ), আলেক্স গ্রিমাল্দো (বায়ারলেভারকুজেন)

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top