04/11/2025 বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে : আইনমন্ত্রী
নিউজ ডেস্ক
৩০ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫৬
আইনমন্ত্রী বলেন, "কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, সেটা নির্বাহী আদেশেই হয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা এক কথা, আর দল নিষিদ্ধ করা আরেক কথা।"
বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীকে সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের মধ্যে ‘সহিংসতার জন্য’ সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বুধবারের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেছেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামীকালকের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি কিছুক্ষণ পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসব। কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে, সেটা যখন সিদ্ধান্ত নেব তখন জানাব। কালকের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত হবে ইনশাআল্লাহ।"
সোমবার রাতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠকে জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে ঐকমত্য হওয়ার পর মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইনমন্ত্রী।
জামায়াতকে নিষিদ্ধের আলোচনা গত ১০ বছর ধরেই চলছে। এখন কোন প্রক্রিয়ায় কোন কারণে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে তা আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।
উত্তরে তিনি বলেন, "গত ১৬ থেকে ২০ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, সেখানে আন্দোলনকারীরা বলেছেন যে তারা সহিংসতার মধ্যে নেই। আমাদের কাছে তথ্য উপাত্ত আছে যে, এই জামায়াত, শিবির, বিএনপি, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটা করেছে। এই দলটাকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে আইনশঙ্খলা ও দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে।"
আরেক প্রশ্নের উত্তর মন্ত্রী বলেন, "কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয়, সেটা নির্বাহী আদেশেই হয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা এক কথা, আর দল নিষিদ্ধ করা আরেক কথা।"
এর আগে সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের যৌথসভার শুরুতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, জামায়াতকে কীভাবে নিষিদ্ধ করা হবে, সেই আইনি দিক তারা খতিয়ে দেখছেন।
“আপনারা জানেন ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা আমরা গতরাতে গণমাধ্যমকে অবহিত করেছি।
“এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে সরকার। সেটার প্রক্রিয়া কী হবে, সেটার আইনগত দিক দেখেশুনে সরকার শিগগরিই পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। কারণ আমরা আইনগত দিকটি ভালভাবে দেখে নিতে চাই; যাতে কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে এ অপশক্তি আর কোনো সুযোগ না পায়।”
জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য দীর্ঘদিনের দাবির বিষয়টি তুলে ধরে কাদের বলেন, “শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে একাত্তরে ঘাতক-দালল নির্মূল কমিটির গঠিত গণআদালত ও পরবর্তীতে গণজাগরণ মঞ্চের দাবিও ছিল জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা।
“জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে হাই কোর্টের রায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত বহাল রেখেছে। দেশের গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন না থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এমন নজির আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে জার্মানিতে হিটলারের নাৎসি বাহিনী রাজনীতি করতে পারে না।”
১৪ দলের বৈঠকে যা হয়েছিল সোমবার গণভবনে চৌদ্দ দলের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “১৪ দলের এ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে জামায়াত-শিবির গোষ্ঠীর অপশক্তির রাজনীতি নিষিদ্ধ করার জন্য। ১৪ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রদল, শিবির তাদের দোসর উগ্রবাদী জঙ্গি গোষ্ঠী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব নস্যাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্র করছে।
“অতিসম্প্রতি চোরা-গোপ্তা হামলা করে এবং গুলি বর্ষণ করে সরকারের উপর দায় চাপাতে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যসহ মানুষ হত্যা করে লাশ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রেখেছে। এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যে প্রক্রিয়ায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী এ অপশক্তিকে নির্মূল করা প্রয়োজন।"
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর সে দাবি আরো জোরালো হলেও গত ১৫ বছরে জোরালো কোনো উদ্যোগ সরকারের তরফে নেওয়া হয়নি।
এবার কোটাবিরোধী আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেওয়ার পেছনে বিএনপি ও জামায়াতকে দায়ী করে আসছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। তার মধ্যেই আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত এসেছে।