পরকীয়ায় অন্যের সংসার ভেঙেছেন বুয়েট শিক্ষক -নির্বিকার প্রশাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ ২২:১৬; আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৩ ১৮:০৪

একের পর এক নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহফিজুর রহমান।
পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে অন্যের সংসার ভাঙা, শিক্ষার্থীদের অশালীন প্রস্তাব দেয়া এবং পছন্দের ব্যক্তিগত জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
তবে চাকরির শৃঙ্খলাবিরোধী এসব অপকর্মের পরও চাকরিতে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগীদের নানা অভিযোগের পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী শিক্ষক হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছেনা বুয়েট প্রশাসন।
বুয়েট সূত্র জানায়, ড. মাহফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবত নানা অপকর্মের অভিযোগ আসছিল। তবে সম্প্রতি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক উর্ধতন কর্মকর্তার ফেসবুক স্ট্যাটাসের পর বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়।
ওই কর্মকর্তার স্ত্রীর সাথে পরকিয়া এবং অনৈতিক সম্পর্কের মাধ্যমে তার সংসার ভাঙেন বুয়েটের এই শিক্ষক। এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বুয়েট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিয়ে বিচার চাইলেও শুধুমাত্র হাতে লেখা কাগজে প্রাপ্তিস্বীকার করে দায় সেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
শুধু তাই নয়, বিচার চাওয়ায় ড. মাহফিজুর রহমান হত্যার হুমকি দিচ্ছেন ভুক্তভোগীকে। এ ঘটনায় থানায় জিডিও করেছেন সাজানো সংসার হারানো ওই ভুক্তভোগী। ভুক্তভোগী তানভীর মাহমুদ জানান, ২০১৭ সালে পেট্রোবাংলার উপ-ব্যবস্থাপক মুসলিমা আকতারকে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের পরই চলে যান ফিনল্যান্ডে। স্ত্রী রয়ে যান ঢাকায়। এই সুযোগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে মুসলিমা আকতারের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বুয়েটের অধ্যাপক ড. মাহফিজুর রহমানের। বিষয়টি বুঝতে পেরে মাহফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি জিডিও করা হয়।
এ ছাড়া ড. মাহফিজুর রহমানের নীতিবহির্ভূত কর্মকাণ্ডের প্রতিকার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন জানান তানভীর মাহমুদ। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর এই আবেদন করা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অভিযোগ পাওয়ার পর সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেছিলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এ ব্যাপারে উপাচার্য অবগত আছেন। বিষয়টি থানা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায়। পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্ত্রীর পরকীয়া থামাতে না পেরে ভুক্তভোগী তানভীর মাহমুদ অভিযোগ দেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে। স্বামী তানভীরের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে মুসলিমা আকতার ইতোমধ্যে ফিনল্যান্ডের নাগরিকত্বও নিয়েছেন। কিন্তু সরকারি চাকরি থেকে ইস্তফা না দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী তানভীর মাহমুদ অপু বলেন, ‘বুয়েটের ওই শিক্ষকের কারণে আমার সংসার ভেঙে গেছে। আমি শুনেছি ওই শিক্ষক প্রভাবশালী। এই কারণে আমি বিচার পাচ্ছি না।’ তার প্রাক্তন স্ত্রী মুসলিমা আকতার সরকারি চাকরিতে বহাল থেকেই ফিনল্যান্ডে নাগরিকত্ব নিয়েছেন জানিয়ে তানভীর বলেন, ‘আমি জ্বালানি মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ দিয়েছি।
সরকারি চাকরি করেই মুসলিমা আকতার আমার মাধ্যমে ফিনল্যান্ডে নাগরিকত্ব নিয়েছে। এটি নিয়ে ঝামেলা হয়ে আছে। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত কমিটিও হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তীতে আর কোনো সুরাহা হয়নি। এই কারণে আমি হতাশাগ্রস্ত।’ সাজানো সংসার তছনছ করে দেয়ায় ড. মাহফিজুর রহমানের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে তিনি বলেন, তার মতো নীতিভ্রষ্ট লোক বুয়েটের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে থাকতে পারেননা। এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. মাহফিজুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: